এফএম-৭৮৬’র প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশান অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন ৫ সাংবাদিক

নিউজ ডেস্ক, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: এফএম-৭৮৬’র প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশান অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন ৫ সাংবাদিকযুক্তরাষ্ট্রের বাংলা ভাষাভাষীদের জনপ্রিয় গণমাধ্যম, কমিউনিটি নিউজ নেটওয়ার্ক এফএম-৭৮৬ ডটকম। এবারের মার্কিন নির্বাচন নিয়ে বেশকিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল এই ডিজিটাল রেডিওর। সেসব অনুষ্ঠানে অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিক বিভিন্নভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্য থেকে ৫ জন আগামী ৪ বছরের জন্য পাচ্ছেন এফএম-৭৮৬’র বিশেষ সম্মান ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশান অ্যাওয়ার্ড-২০২০’। তারা হলেন- নাজমুল আহসান, ইব্রাহিম চৌধুরী, শামিম আল আমিন, হাসানুজ্জামান সাকী এবং শাহ জে আহমেদ। মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেয়া হবে। এবার জেনে নেওয়া যাক খ্যাতিমান এই ৫ সাংবাদিকের আদ্যোপান্ত।

নাজমুল আহসান
প্রবাসের খ্যাতিমান সংবাদযোদ্ধা নাজমুল আহসান। তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিভিন্নভাবে যুক্ত আছেন সাংবাদিকতার সঙ্গে। বর্তমানে নিউইয়র্কের বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে জনপ্রিয় ও সুপ্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম সাপ্তাহিক পরিচয়ের প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন প্রথিতযশা এই সাংবাদিক। ১৯৭৭-৭৮ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রথম ক্রীড়া পাক্ষিক ‘খেলার মাঠ’-এর সম্পাদক ছিলেন নাজমুল আহসান। ১৯৯৩-৯৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ইংরেজি মাসিক ‘ভয়েস অব বাংলাদেশ’-এর নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর গত ২৯ বছর ধরে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পরিচয় পত্রিকার। ১৯৮২ সাল থেকে নিউইয়র্কে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন নাজমুল আহসান। সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের বারুক কলেজে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমস-এ গ্রাজুয়েশন করেছেন ১৯৮৭ সালে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি টক শোর সাথেও যুক্ত আছেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। দেশ-বিদেশের সমসাময়িক নানা বিষয়ে নিজের মতামত অসাধারণভাবে তুলে ধরতে পারেন নাহমুল আহসান। জড়িত আছেন লেখালেখির সাথেও। নিউইয়র্কের ফরেস্ট হিলে স্বপরিবারে বসবাস করছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক কন্যা ও পুত্র সন্তানের জনক।

ইব্রাহিম চৌধুরী
আশির দশকের শুরুতে সিলেট থেকে প্রকাশিক একটি পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবন শুরু ইব্রাহিম চৌধুরীর। ১৯৮৯ সালে তিনি সিলেটের সংবাদপত্র সাপ্তাহিক খবরের কাগজে যোগ দেন। এরপর ১৯৯১ সালে যুক্ত হন দৈনিক ভোরের কাগজে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পরেও এখানেই তিনি কর্মরত ছিলেন। এরপর ‘প্রথম আলো’র যুক্তরাষ্ট্র সংবাদদাতা হিসেবে পথচলা শুরু করেন ইব্রাহিম চৌধুরী। আলোচিত ৯/১১’র পরিক্রমা নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে পাঠানো তার রিপোর্ট পড়েছে গোটা বাংলাদেশের মানুষ। সেই থেকে ইব্রাহিম চৌধুরী প্রথম আলোতে লিখছেন। বিদেশের মাটিতে বাংলা ভাষার প্রতিবেদনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। পাঠকের জন্য প্রচুর স্মরণীয় ঘটনা কভার করেছেন। এরমধ্যে হার্ভার্ড সেমিনারস, ইউএন, নিউইয়র্কে নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের শেষ দিনগুলি, বিশ্বব্যাংক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং কমিউনিটি ইভেন্ট নিয়ে ইব্রাহিম চৌধুরী লিখেছেন অবিচ্ছিন্নভাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি, নির্বাচন এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটেও তার লেখনী অনবদ্য ভুমিকা রেখেছে। ইব্রাহিম চৌধুরী একজন একনিষ্ঠ সাংবাদিক। পাশাপাশি লেখেন বই। সাংবাদিকতা নিয়ে তার লেখা বই ‘স্মৃতি ও সংবাদ’ বেশ প্রশংসিত হয়েছে। প্রথম আলোর উত্তর আমেরিকার দায়িত্ব নেয়ার পরে, তিনি একদল তরুণ লেখক এবং সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করছেন। মহামারী চলাকালীন সময়ে ইব্রাহিম চৌধুরী এবং তার দলের সাংবাদিকরা ৭০০ টিরও বেশি প্রতিবেদন করেছে। মার্কিন নির্বাচনে তিনি ও তার দল বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে, করেছে অসংখ্য প্রতিবেদন। ব্যক্তিগত জীবনে ইব্রাহিম চৌধুরী স্ত্রী এবং ২ সন্তানের সাথে নিউজার্সিতে বসবাস করছেন।

হাসানুজ্জামান সাকী
একজন প্রবাসী খ্যাতিমান সাংবাদিক তিনি। সময় টিভির যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে বর্তমানে কাজ করছেন তিনি। একইসাথে যুগান্তর পত্রিকার যুক্তরাষ্ট্রের করেসপন্ডেন্ট হাসানুজ্জামান সাকি। পাশাপাশি, ‘এনআরবি কানেক্টের’ চিফ এক্সিকিউটিভ এডিটরের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। ছিলেন টিবিএন-২৪’র প্রতিষ্ঠাতা এবং চিফ এক্সিকিউটিভ এডিটর। কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাপ্তাহিক আজকালের’ অ্যাসোসিয়েট এডিটর হিসেবে। এছাড়া, বৈশাখী টিভির চিফ রিপোর্টার, এটিএন বাংলা, যমুনা টিভি, দৈনিক সমকাল, মানবজমিন, সাপ্তাহিক খোলা জানালা এবং বাংলাদেশের প্রথম ২৪ ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেল সিএসবিতে সফলতার সাথে দায়িত্ব সামলেছেন হাসানুজ্জামান সাকী। টক শো’র উপস্থাপক এবং লেখক-কলামিস্ট হিসেবেও অধিক পরিচিত তিনি। টিভি রিপোটিং-প্রডাকশন-উপস্থাপনা এবং এয়ার ম্যানেজমেন্টের ওপর সমান দক্ষতা আছে হাসানুজ্জামান সাকীর। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সিএনএন’র আনিতা ম্যাক’নাট, বিবিসি’র রিচার্ড গোসলান এবং অরুন আস্তানা ও ইএসপিএন’র পুনম শরমার কাছে। কর্মজীবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতকার নিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে অনেক টক শোতে সঞ্চালকের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। টাইম টেলিভিশনের জনপ্রিয় টক শো টাইম পলিটিক্স-এ গেস্ট হোস্ট ছিলেন তিনি; করেছেন এনআরবি কানেক্টে ‘সাকি ওভার দ্য ওয়ার্ল্ড’ অনুষ্ঠান। তার সঞ্চালনায় সিএসবিতে রিপোর্টাস এবং বৈশাখীতে রিপোর্টাস ডায়েরি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সাংবাদিক হিসেবে ২০১০ থেকে ২০১২০ পর্যন্ত ১১ দফা জাতিসংঘের জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে অংশগ্রহণ করার গৌরব অর্জন করেছেন হাসানুজ্জামান সাকী। এছাড়া, ২০১২, ২০১৬ এবং সবশেষ ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের সংবাদ তুলে ধরেছেন তিনি। বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি, ২০১১ সালে জেনেভায় ১৬-তম আবহাওয়া সংক্রান্ত কংগ্রেস, ২০১১ সালে ইস্তাম্বুলে লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রি-এলডিসি সামিট, একই বছর অস্ট্রেলিয়ায় কমনওয়েলথ হেড অব গভমেন্ট মিটিং-সিএইচওজিএম অংশ নেয়ার অভিজ্ঞাত আছে তার ঝুলিতে। এছাড়া, ২০০৭ সালে দিল্লিতে ১৪-তম সার্ক সামিটে কভার করেছেন সাকী। ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহে ২৫ টি রাজ্যে চষে বেড়িয়েছেন তিনি। ওহিওসহ কয়েকটি স্থানে প্রেসিডেন্টশিয়াল বিতর্ক অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ করেছেন তিনি। ১৯৭৮ সালের ২১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন খ্যাতিমান এই সাংবাদিক।

শামীম আল আমিন
একজন সাংবাদিক, লেখক এবং জাতীয় স্বর্ণপদক বিজয়ী সাংস্কৃতিক কর্মী তিনি। ৭১ টিভি’র উত্তর আমেরিকার বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত আছেন। সেই সাথে টিবিএন-২৪’র টক শো এবং প্রোগ্রাম উপস্থাপক। দৈনিক কালের কণ্ঠর উত্তর আমেরিকার বিশেষ প্রতিবেদক, এফবি টিভি, ফ্লোরিডার এডিটর ইন চিফ, সেন্ট্রাল কুইন্স আইপিএ’র কোয়ালিটি অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কাজ করছেন শামীম আল আমিন। আগে তিনি টিবিএন ২৪ এর হেড অফ নিউজ, একাত্তর টিভি’র বিশেষ প্রতিবেদক, এসিস্ট্যান্ট এডিটর এবং উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। সেই সাথে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি’র সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বিশেষ প্রতিদেবক হিসেবেও সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। চ্যানেল ওয়ান এবং প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার এবং বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবেও তিনি কর্মরত ছিলেন। বিবিসি বাংলা এবং সাপ্তাহিক রবিবার-এ তিনি তার যোগ্যতার সাক্ষর রেখেছেন। অলাভজনক সংস্থা ফ্রেন্ডস অফ ফ্রিডম, নিউইয়র্কের প্রধান সমন্বয়কারী তিনি। ২০১২ এবং ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনের সংবাদ কভারের অভিজ্ঞতা আছে তার। বাংলাদেশের ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করেন তিনি। ভুটানে ২০১১ সালের সার্ক সম্মেলন, ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন, ২০১৫ সালে আইসিসি অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ, ২০১৪ সালের সালের ভারতের লোকসভা নির্বাচন, ২০১৫ সালে ইউকে নির্বাচন, ২০০৮ সালে গ্রিসের অ্যাথেন্সে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন সম্মেলনসহ অসংখ্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা বিষয়ে তার প্রতিবেদন বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশানে বুদ্ধিদীপ্ত সাংবাদিকতা অগ্রগন্য ভুমিকা রেখেছে। , ২০১১ সালে নিউইয়র্কে ক্লিন্টন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের বার্ষিক সভা, বেশ কয়েক দফা নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সংবাদ সংগ্রহ করেছেন তিনি।

শাহ জে আহমেদ
শাহ আহমেদের সাংবাদিকতা জীবন শুরু ২০১৬ সালে। নিউইয়র্কের জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল আওয়াজবিডি’র প্রতিষ্ঠাতা তিনি। যুক্ত আছেন প্রথম আলোর উত্তর আমেরিকার লেখক হিসেবে। শাহ আহমেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা খবরের প্রতিবেদনের জন্য জনপ্রিয় একজন সাংবাদিক। সবচেয়ে কনিষ্ঠতম সম্পাদকও তিনি। শীর্ষস্থানীয় বাংলা সংবাদপত্র এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা সাংবাদিকতা বিষয়ে কাজ করছেন শাহ আহমদ। আওয়াজবিডির দায়িত্ব নেয়ার পরে ধারাবাহিকভাবে তথ্যমূলক সংবাদ এবং কমিউনিটিকে সহায়তা করে যাচ্ছেন তিনি। করোনা মহামারী চলাকালীন শাহ আহমদ এবং তার দলের সাংবাদিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১০০০ টিরও বেশি প্রতিবেদন, লাইভ রিপোর্ট করেছেন। সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের জন্য বিভিন্ন মহলে প্রশংসিতও হয়েছেন তিনি। মার্কিন নির্বাচন এবং প্রতিদিনের আপডেট কভার করেছে তার দল এবং শাহ আহমদ। আমেরিকান বাংলাদেশিদের জন্য তার প্রতিষ্ঠিত অনলাইন পোর্টাল ‘আওয়াজবিডি’সংবাদ পাঠদানের একটি অন্যতম নির্ভরযোগ্য উৎস।

Leave a Reply