জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ইরান সফরে যাচ্ছেন

পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে চলমান উত্তেজনার মধ্যে কাল বুধবার ইরান সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। দীর্ঘ ৪১ বছর পর এই প্রথম জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রী ইরান সফর করবেন।

জাপানের সংবাদমাধ্যমের ইঙ্গিত, ইরান সফরের মধ্য দিয়ে আবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাঁর দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করবেন। আর এই সূত্র ধরেই হয়তো বিশ্বের জটিল সব রাজনৈতিক বিতর্কে গ্রহণযোগ্য এক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে জাপানের আবির্ভাব ঘটবে।

গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাপান সফর করেন। এ সময় আবে তাঁর তেহরান সফরের পরিকল্পনার কথা বন্ধু ট্রাম্পকে অবগত করেছিলেন।

ট্রাম্পের কাছ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় জাপানি পক্ষ সম্ভবত ধরে নিয়েছে, ওয়াশিংটন হয়তো আবের সফরকে স্বাগত জানাচ্ছে।

মূলত, তখন থেকেই জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ইরান সফর নিয়ে নানা রকম কানাঘুষা জাপানি সংবাদমাধ্যমে শুরু হয়; যদিও জাপান সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনো কিছু বলা হয়নি।

ট্রাম্পের জাপান সফরের আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টোকিও এসেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বিরোধে তেহরানের অবস্থান টোকিওর কাছে তুলে ধরাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্যে। তখন জাপানের পক্ষ থেকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়েছিল, প্রয়োজন হলে জাপান মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত থাকবে।

আবের দুই দিনের সফর শুরু হওয়ার আগে জাপানের সরকারি মহল থেকে আভাস দেওয়া হয়েছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের চলমান বিরোধে মধ্যস্থতাকারী বা মার্কিনপক্ষের বার্তাবাহক হিসেবে তেহরান যাচ্ছেন না; বরং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করা নিয়ে আলোচনা করতে আবে তেহরান সফর করবেন।

ট্রাম্প তাঁর অবস্থানে কঠোর রয়েছেন। আবার ইরান সরকারও অনমনীয়। এর ফল হিসেবেই জাপান সরকারের মনোভাবে হঠাৎ পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করছেন কিছু জাপানি বিশ্লেষক।

আবের তেহরান সফরকে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করছেন। বিশ্লেষকদের ভাষ্য, সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে হয়তো আবের এই সফর মার্কিন নীতিকে কিছুটা হলেও প্রভাবিত করবে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সম্প্রতি এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো মধ্যস্থতার একটি পূর্বশর্ত হতে হবে—২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ওয়াশিংটনের ফিরে আসা।

ছয়টি প্রধান শক্তিধর দেশের সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত চুক্তি থেকে ট্রাম্প গত বছর যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। তারপর থেকে ইরানের ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা তিনি পুনরায় বহাল করতে শুরু করেন।

পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফের ফিরে আসার অর্থ হবে নতুন করে আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। এ বিষয় ট্রাম্পের যে পছন্দ হবে না, সে আভাস জাপান ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছে। ফলে, হয়তো আবের তেহরান সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে এখন জাপানের কাছ থেকে ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।

উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় পর জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রী ইরান যাচ্ছেন—এই বিবেচনায় সফরটির ভিন্ন এক গুরুত্ব আছে। ফলে, কোন অর্জন নিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে তাঁর ইরান সফর শেষ করে নিজ দেশে ফিরে আসেন, সেদিকেই এখন সবার নজর।

Leave a Reply