মাদারীপুর জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আমেনা খাতুনের বাসা থেকে তাঁর গৃহপরিচারিকার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে শহরের পৌর এলাকার ২ নম্বর শকুনি এলাকার ওই বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ওই গৃহপরিচারিকার নাম রুসি আক্তার (২৫)। তিনি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল এলাকার শাজাহান মোল্লার মেয়ে। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আমেনা খাতুনের বাসায় তিনি গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন।
আমেনা খাতুনের পরিবারের সদস্যরা জানান, রুসি আমেনা খাতুনের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। রুসি দীর্ঘদিন ধরে এখানেই থাকতেন। শুক্রবার দুপুর থেকে বাসার একটি কক্ষের দরজা বন্ধ করে রাখেন রুসি। পরে সন্দেহ হলে পরিবারের সদস্যরা আশপাশের লোকজন ডেকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত থাকা অবস্থায় রুসিকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আমেনা খাতুনের ছোট ছেলে মাহামুদ দিনার রুসিকে মানসিকভাবে অত্যাচার করতেন। মাঝেমধ্যে রুসি এর প্রতিবাদ করলে দিনার তাঁকে মারধর করতেন। আমেনা খাতুনের পরিবারের সদস্যরা রুসিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশটি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন বলে তাঁরা সন্দেহ করছেন।
আমেনা খাতুনর ২ নম্বর শকুনি এলাকার একটি বহুতল ভবনের নিচতলায় ভাড়া থাকেন। ওই বাসার মালিক সেন্টু খান বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে এসে দেখি, লাশ নিয়ে গেছে। তবে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, বিছানার ওপর যেভাবে টুল রাখা তা দেখে মনে হয়, এর পেছনে অন্য কারণ আছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার দাবি জানাই।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আমেনা খাতুনের পরিবারের সদস্যরা। আমেনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় ছিলাম। আজ লঞ্চে বসে শুনি, রুসি আত্মহত্যা করেছে। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমি রুসিকে বাসার কাজের লোক মনে করি না। নিজের মেয়ের মতো মনে করি। কখনো রুসির সঙ্গে আমরা খারাপ আচরণ করি নাই। আমার দুই ছেলে ও এক বউমা রুসির সঙ্গে সব সময় ভালো ব্যবহার করে। এই খবর শুনে আমার পরিবারের সদস্যরা সবাই কষ্ট পাচ্ছে। আমি নিজেও কষ্ট পাচ্ছি। আমার একটা প্রশ্ন, এই আত্মহত্যার পেছনে কারণ কী?’ রুসির পরিবারের ফোন নম্বর বা যোগাযোগের কোনো মাধ্যম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি রুসির পরিবারের ফোন নম্বর বন্ধ পাচ্ছি। আপনারা বন্ধ নম্বর নিয়ে কী করবেন। আমরা রুসির পরিবারকে খবর দিয়েছি। তারা হয়তো কিছু সময়ের মধ্যে চলে আসবে।’
গতকাল সন্ধ্যায় মাদারীপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. রিয়াদ মাহমুদ বলেন, ‘মেয়েটিকে জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে আমরা চেকআপ করে দেখি, হাসপাতালে আনার আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তার গলায় দাগ রয়েছে। এ ছাড়া শরীরের আর কোনো অংশে তেমন কোনো চিহ্ন পাইনি। তবে ময়নাতদন্ত এখনো হয়নি।’
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মাদারীপুর সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক রহমত আলী বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর খবর পেয়ে তাঁরা হাসপাতালে যান। লাশের গলায় কালো দাগ রয়েছে।
এ ছাড়া তেমন কোনো গুরুতর আঘাতের চিহ্ন তাঁরা পাননি। এটা হত্যা না আত্মহত্যা, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বোঝা যাবে। তিনি বলেন, ‘নিহতের পরিবারের সঙ্গে আমরা এখনো কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে বেবির পরিবার থেকে তাদের কাছে খবর পাঠানো হয়েছে। তারা এসে যদি কোনো অভিযোগ দেয় তবে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।