সাধারণত কালােজিরা নামে পরিচিত হলেও এর আরাে কিছু নাম আছে, যেমন কালাে কেওড়া, রােমান করিয়েন্ডার বা রােমান ধনে, নাইজেলা, ফিনেল ফ্লাওয়ার, হাব্বাটুস উডা ও কালঞ্জি ইত্যাদি। যে নামেই ডাকা হােক না কেনো এই কালাে বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা অপরিসীম। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন থেকে শুরু করে শরীরের কোষ ও কলার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কালােজিরা। কালােজিরা চুল ও ত্বকের জন্যও অনেক উপকারী। প্রত্যেকের রান্নাঘরেই কালােজিরা থাকে যা খাবারকে সুবাসিত করে। ভারতবর্ষসহ সমগ্র স্থানেই পাওয়া যায়। ব্যবহার্য অংশ বীজ।
উপকারিতা: ভিন্ন প্রকার চর্মরােগ সারাতে; শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি করতে; স্বাস্থ্য ভালাে রাখতে; হজম সমস্যা দূরীকরণে; লিভারের সুরক্ষায়; দেহের সাধারণ উন্নতি; রুচি বাড়াতে, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, যকৃতের বিষক্রিয়া নাশক, রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। টিউমার এবং ক্যান্সার প্রতিরােধক হিসেবে কালােজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে । মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা, দুর্বলতা, নিষ্কিয়তা ও অলসতা, আহারে অরুচি, মস্তিষ্ক শক্তি তথা স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও কালােজিরা অব্যর্থ। পেটের যাবতীয় রােগজীবাণু এবং দেহের কাটাছেড়া শুকানাের জন্য কাজ করে। এছাড়া শরীরে সহজে ঘা, ফোঁড়া, ছোঁয়াচে রােগ হয় না। কিডনির পাথর দূর করতেও কার্যকরী। তারুণ্য ধরে রাখতে মধ্যপ্রাচ্যে কালােজিরা খাওয়াটা দীর্ঘদিনের রীতি। কাজ করার শক্তিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে কালােজিরা। ভাইরাস জনিত রােগ নিরাময় অব্যর্থ।
চাষাবাদ পদ্ধতি: ভালো করে কুপিয়ে বা লাঙ্গল দিয়ে মাটি মিহি করতে হবে। নিড়ানি দিয়ে ঘাস ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। অল্প পরিমাণ অর্থাৎ ১০ শতাংশ বা তার কম জমিতে চাষ। করলে ৫ সেমি বা দুই ইঞ্চি উচু বেড তৈরি করা ভালাে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে ৬ ইঞ্চি। (১৫ সেমি) মাটি আলগা থাকে। অগ্রহায়নের মাঝামাঝি সময়ে মাটিতে জো আসলে জমি তৈরি করা আরম্ভ করা যেতে পারে। সার মেশানাের এক সপ্তাহ পরে প্রয়ােজন হলে একবার নিড়ানি দিয়ে বেড তৈরি শেষ করতে হবে। বীজ সংগ্রহ ও বীজ রােদে শুকিয়ে ঠাণ্ডা করে কুলা দিয়ে পরিষ্কার করে চটের বস্তায় বা মাটির পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে অন্তত এক বছর পর্যন্ত বীজ ভালােভাবে সংরক্ষণ করা যায়। মানসম্মত বীজ সংরক্ষণে পাত্র শুকনাে, ঠাণ্ডা, অন্ধকার জায়গায় রাখতে হবে।
চারা রােপণ ও অন্যান্য পরিচর্যা: বীজ লাগানাের পরই হালকা করে মাটি দিয়ে গর্ত ঢেকে দিতে হবে। পাখিতে বীজ খেতে না পারে, সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়ােজন হলে আগাছা। পরিষ্কার করতে হবে। জমি বেশি ভেজা থাকলে মাটি আলগা করে রস বের করতে।
রােগবালাই ও অন্যান্য সমস্যা: কালােজিরা সহজে তেমন কোনাে পােকামাকড়ে আক্রান্ত করে না। বরং এর স্বাভাবিক পােকামাকড় ধ্বংসের ক্ষমতা আছে। সে রকম রােগবালাইও তেমন হয় না। মাঝে মাঝে কিছু ছত্রাক আক্রমণ দেখা দিলে রিডােমিল গােল্ড বা ডাইথেন এম ৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ২-৩ বার ১০ দিন পরপর ছিটিয়ে দিতে হবে।
সংগ্রহ ও সংরক্ষণ: ১ বিঘা জমিতে চাষ করলে গড়ে ৯০ থেকে ১১০ কেজি কালােজিরা পাওয়া যাবে। একর প্রতি ৩০০ কেজি থেকে ৩৩০-৩৪০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। বারি কালােজিরা-১ সঠিক পরিচর্যায় হেক্টর প্রতি ১ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন দেয়। ফাল্গুন-চৈত্রে গাছ মরে গেলে গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করে ২ দিন রােদে শুকিয়ে নিয়ে হাতে সাবধানে আঘাত করে। মাড়া করে বা লাঠি দিয়ে বীজ সংগ্রহ করা যায়। গাছে সামান্য রস থাকতেই ফল সংগ্রহ করা উচিত, তা না হলে বীজ জমিতে ঝরে পড়তে পারে।
সূত্র: বাংলাদেশের ঔষধি উদ্ধিদের পরিচিতি,