একজন হাক দিয়ে বলছেন, ‘যা নিবেন ১০০ টাকা… বাইচ্ছা লন ১০০ টাকা… দেইখ্যা লন ১০০ টাকা। অন্য পাশ থেকে আরেকজন হাঁকছেন একদাম দেড়শ’ দেড়শ’ দেড়শ’। কেউ একজন হাঁকছেন আসেন বিশ টাকা.. বিশ টাকা.. বিশ টাকা। এভাবেই পণ্যভেদে দাম কম বেশি। এই চিত্র কোন মার্কেটের সামনের ফুটপাতের দৃশ্য নয়। এটা ঢাকা আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য মেলার ভেতরের চিত্র। তবে এইরকম পণ্যের সমাহার দেখে বিরক্ত ক্রেতারা ।
মেলায় ঘুরতে আসা দোলা বলেন, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। প্রতিবছর মেলায় নানা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আসি। এবারও তার ব্যতিক্রম না। রীতিমত অফিস ছুটি নিয়ে এসেছি। কিন্তু মেলা ঘুরে দেখে মনে হচ্ছে অনেকটাই ‘ফুটপাত পণ্যের’ মেলায় রূপ নিয়েছে এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।
বাণিজ্য মেলার ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক মানের পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন করবেন- এমন লক্ষ্য নিয়েই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ১৯৯৫ সালে বসে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।
মাসব্যাপী এ মেলায় বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, ইরান, জাপান, চিন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও দেশের প্রতিষ্ঠানের নামে মেলায় পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।
দেশি-বিদেশি পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন, রফতানি বাজার অনুসন্ধান এবং দেশি-বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে এ মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিল্পপণ্য ও ভোগ্যপণ্য উত্পাদনকারীরা একদিকে তাদের উত্পাদিত পণ্যের গুণগত মান, ডিজাইন, প্যাকেজিং ইত্যাদি প্রদর্শন ও বিপণন করতে পারবেন, অন্যদিকে পারস্পরিক সংযোগ স্থাপনসহ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসারের সুযোগ লাভ করবেন, এটা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
কুমিল্লা কারুপল্লী স্টলটির উল্টো দিকে বিক্রি করছে নিম্নমানের বাচ্চাদের খেলনা। কারুপল্লীর দোকানের কর্ণধার আব্বাস সাহেব আরটিভি অনলাইনে বলেন, মেলায় নিম্ন মানের পণ্যে বিক্রি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। এইভাবে নিম্নমানের পণ্যে মেলায় আসতে থাকলে মানুষ ভালো মানের পণ্যে নিয়ে আসবে না। এতে মেলা আরও নিম্নমানের হবে। মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষকে এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি আগে কখনও ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় আসিনি। এবারই প্রথম আসলাম। গুগলে সার্চ দিয়ে উইকিপিডিয়ার তথ্যে দেখলাম- এ মেলা দেশি-বিদেশি পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন, রফতানি বাজার অনুসন্ধান এবং দেশি-বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে আমার ধারণা ছিল- মেলায় আন্তর্জাতিক মানের পণ্য থাকবে। কিন্তু মেলায় এসে হতবাক হয়েছি। এখানকার বেশিরভাগ পণ্য মনে হচ্ছে গুলিস্তান-চকবাজারের পণ্য। একটি আন্তর্জাতিক মেলায় এভাবে নিম্ন মানের পণ্য আসলে মেলার মান ও আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের উচিত এদিকে নজর দেয়া।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, মেলার বেশ কয়েকটি স্টল থেকে বিক্রেতারা হাতে মাইক নিয়ে তালে তালে ‘দেইখ্যা লন, বাইছা লন, একদাম দেড়শ’ -এমন হাকডাক দিচ্ছেন, আর উৎসুক ক্রেতা-দর্শনার্থীরা তাদের চারপাশ ঘিরে তা উপভোগ করছেন।
সেই সঙ্গে স্টলের ভেতরে ঘুরে ঘুরে দেখছেন বিভিন্ন পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে- শোপিস, খেলনা গাড়ি, ট্রেন, বিল্ডিং, খেলনা পিস্তলের পাশাপাশি রান্না করার ফ্রাইপেন, কারি কুকার, পিঠা বানানোর সাচ, পানির বোতলসহ বিভিন্ন পণ্য।
১৫০ টাকার এই স্টলের পাশাপাশি বিদেশিদের নামে যেসব প্যাভিলিয়ন রয়েছে তার বেশ কয়েকটিতে বিক্রি হচ্ছে চকবাজার, বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট ও গাউসিয়ার পণ্য। তবে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের তুলনায় মেলার এসব স্টলে পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি। বিদেশি প্যাভিলিয়নের পাশাপাশি দেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও নিম্ন মানের ‘ফুটপাত পণ্য’ বিক্রি করা হচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ৫৯৯ টাকায় তিন সেট থ্রি-পিস, ইলেকট্রিক সামগ্রী একটি কিনলে দশটি ফ্রি’র মতো অফার।