নড়াইলে শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদের অবস্থান কর্মসূচিতে বাধা,

নড়াইল জেলা প্রতিনিধি নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রদেশ কুমার মল্লিকে অভিভাবক কর্তৃক লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে ছাত্রদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় ছাত্রদের ওপর পিস্তল দিয়ে গুলি করারও ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে ছাত্ররা নড়াইল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নড়াইল-যশোর সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তৎপরতায় রাস্তা থেকে ছাত্রদের স্কুলে ফিরিয়ে নেয়া হয়। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বলথেকে রায় জানান, রোববার সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ সব কর্মসূচি পালন করে।

জানা যায়, শনিবার (১৫ জুন) সকালে নড়াইল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রদেশ কুমার মল্লিক তার প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী সানজিদা এরিনাকে একটি চড় মারেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী বাড়িতে গিয়ে তার বাবার কাছে কেঁদে পড়েন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওই ছাত্রীর পিতা স্থানীয় ঠিকাদার মঈনউল্লাহ দুলু ওই শিক্ষককের কোচিং সেন্টারে গিয়ে শিক্ষকের ওপর চড়াও হন। এসময় ওই শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিক করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় রোববার সকালে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ওই ছাত্রীর অভিভাবকদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের কক্ষে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়। এদিকে ওই সময়েই বিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।

অবস্থানকালে নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.ইয়ারুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিতোষ মজুমদার, শিক্ষক প্রদেশ কুমার মল্লিক ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে বলেন, বিষয়টি মিমাংসা হয়ে গেছে বিধায় ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে না গিয়ে অভিযুক্ত অভিভাবককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার জন্য দাবি তোলেন। এক পর্যায়ে অভিভাবক মঈন উল্লাহ দুলুর পক্ষে ঠিকাদার রেজাউল আলমসহ কয়েকজন ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন এবং স্কুলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন।তারা কিন্তু অনুরোধ রক্ষা না করায় এবং বহিরাগত কিছু ছেলেরা ওই ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দিয়ে নেতৃত্ব দেওয়ায় অভিভাবক মঈন উল্লাহ দুলুর পক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে ছাত্রদের ওপর চড়াও হয়ে তাদের হুমকি ধামকি দিয়ে ছাত্রভঙ্গ করে দেন। এসময় ঠিকাদার রেজাউল আলম তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে ছাত্রদের দিকে তাক করিয়ে গুলি চালানোর হুমকি দেন। এতে ছাত্রদের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নারী নেত্রী আনজুমান আরা ঠিকাদার রেজাউল আলমের কাছে গিয়ে অস্ত্র পকেটে রাখার জন্য অনুরোধ করেন।

এ ব্যাপারে মঙ্গন উল্লাহ দুলু বলেন, ‘বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তোলার কোন নিয়ম নেই। ওই শিক্ষক প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে অনেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে। আমার মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে এসে জানালে তখন রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ওই শিক্ষককে ধরে নিয়ে থানায় দেয়ার চেষ্টা করি। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি মিমাংসা করে দেন। তবে ওই শিক্ষককে মারধোর করা হয়নি।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাত্রদের ওপর অস্ত্র বের করার বিষয়টি রেজাউল আলম অস্বীকার করেন।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষক প্রদেশ মল্লিক জানান,‘শনিবার সকালে তার ভাড়ার বাসায় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর সময় সপ্তাহিক পরীক্ষা নেয়ার সময় ঠিকাদার মো.মইনউল্লা দুলুর মেয়ে সানজিনা এরিনা খাতায় নাম না লিখে জমা দেয়, খাতায় নাম লেখোনি কেন? এ প্রশ্ন করলে সে খাতা আমার সামনে ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে বাড়ী থেকে তার বাবাকে ডেকে নিয়ে আসে । তিনি এসে শিক্ষার্থীদের সামনে আমার সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে বসে এ অপ্রীতিকর ঘটনার সমাধান হয়েছে।’
এপ্রসঙ্গে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (পিপিএম বার),আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, কে বলেন,‘ঠিকাদার রেজাউল আলমের লাইসেন্সকৃত পিস্তলটি বেআইনীভাবে ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা জানান,‘দু’পক্ষকে ডেকে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে। এছাড়া ওই সময়ে ব্যবহৃত ঠিকাদার রেজাউল আলমের লাইসেন্সকৃত পিস্তলটি সদর থানায় জমা রাখা হয়েছে।’

Leave a Reply