শিরোপাহীন মৌসুম ভুলতে অনুমিতভাবেই আদা-জল খেয়ে নেমেছে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ। লিগ মৌসুম শেষেই বর্তমান খেলোয়াড়দের ওপর আস্থাহীনতা জানিয়েছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। বিশেষত ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বিদায়ের পর সে অভাব পূরণ করতে পারেননি গ্যারেথ বেল। করিম বেনজেমা তার স্ট্রাইকিং ক্ষমতা অনেকাংশে ফিরে পেলেও, অন্যদের ফর্মহীনতায় সেটা যথেষ্ট হয়নি দলকে টেনে তুলতে। তাই টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হবার পর, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই এবার বিদায় নিতে হয়েছে লস ব্লাঙ্কোসদের। আর লা লিগা শেষ করেছে টেবিলের তৃতীয় স্থানে থেকে। যদিও চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা থেকে পয়েন্ট ব্যবধান আশঙ্কা জাগানিয়া।
মধ্যমাঠে ইসকো-ক্রুসরাও নিজেদের ছন্দ খুঁজে পাননি। আগেভাগেই তাই খেলোয়াড় কেনার ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ও কোচ জিনেদিন জিদান। বিশেষ করে চাহিদামত খেলোয়াড় না পেলে, ক্লাবে থাকবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন মৌসুমের শেষ পর্যায়ে কোচের দায়িত্ব নেয়া জিজু।
‘যে কথা সেই কাজ’ মন্ত্রে টাকার বস্তা নিয়েই খেলোয়াড় কেনা-বেচার বাজারে নেমেছে রিয়াল মাদ্রিদ। সবসময় তারকা খেলোয়াড়ের দিকে আলাদা করে নজর দেয়া মাদ্রিদ জায়ান্টদের এবারের তালিকায় রয়েছে- ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ী ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপে ও মিডফিল্ডার পল পগবা। বেলজিয়ান অ
ধিনায়ক এডেন হ্যাজার্ড থেকে ব্রাজিলিয়ান যুবরাজ নেইমারও রয়েছেন তালিকায়। কিন্তু প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) নাছোড়বান্দা হওয়ায় নেইমারের আশা আগেই ত্যাগ করতে হয়। এমবাপের পেছনে লেগে থাকলেও, এখনও আশার খবর নেই ফ্রেঞ্চ ক্লাবটির পক্ষ থেকে।
যদিও চেলসি থেকে এডেন হ্যাজার্ডকে দলে ভিড়িয়ে ফেলেছে রিয়াল শিবির। সেজন্য পেরেজকে গুণতে হয়েছে একশ’ মিলিয়ন ইউরো। যেটা শর্ত সাপেক্ষে বেড়ে দাঁড়াতে পারে দেড়শ মিলিয়নে! অন্যদিকে সার্বিয়ান স্ট্রাইকার লুকা ইয়োভিচকে চুক্তিবদ্ধ করতে, পোর্তোকে ৬০ মিলিয়ন ইউরো দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার এডার মিলিতাওয়ের জন্য জিদানের খরচ ৫০ মিলিয়ন ইউরো।
সবশেষ বুধবার রাতে ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার ফারল্যান্ড মেন্দিকে দলে ভিড়িয়েছে মাদ্রিদের দলটি। অলিম্পিক লিঁও থেকে ৪৮ মিলিয়ন ইউরোতে, ছয় বছরের জন্য মেন্দিকে চুক্তিবদ্ধ করেছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা।
আগামী ১৯ জুন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সমর্থকদের সামনে মেন্দিকে উন্মোচন করবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ২৪ বছর বয়সী এ লেফট-ব্যাক মৌসুমে লস-ব্লাঙ্কোসদের কেনা চতুর্থ খেলোয়াড়।
এখন পর্যন্ত ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি খরচ করে ফেলেছে রিয়াল মাদ্রিদ! এছাড়া মাদ্রিদে ব্রাজিলিয়ান রদ্রিগোর যোগ দেওয়াটাও প্রায় নিশ্চিত। তার জন্য সান্তোসকে দিতে হবে ৪৫ মিলিয়ন ইউরো। পল পগবাকে স্পেনে আনতে চেষ্টার কমতি রাখছে না রিয়ালের এজেন্টরা। সাদা পোশাক গায়ে জড়াতে প্রস্তুত ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডারও। কিন্তু নিজেদের সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়তে নারাজ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। শেষ পর্যন্ত ইংলিশ জায়ান্টদের রাজী করানো গেলে, প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ইউরো গুণতে হবে রিয়াল মাদ্রিদকে। অর্থাৎ প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরো নিয়ে খেলোয়াড় বাজারে নেমেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
কিন্তু উয়েফার নীতিমালা অনুযায়ী আর একশ মিলিয়নের বেশি খরচ করতে পারবে না রিয়াল মাদ্রিদ। তাই পগবাকে চুক্তিবদ্ধ করার আগে, খরচ যোগাড় করতে নিজের কিছু খেলোয়াড়কে বেচতে হবে রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে। সেক্ষেত্রে সবার ওপরের নাম গ্যারেথ বেল।
২০০৯ সালে রোনালদো-বেনজেমাদের কিনতে ২৫৪ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছিলো রিয়াল মাদ্রিদ। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ হয়ে থাকা সে অঙ্ককে ছাড়িয়ে গেলো জিদানের মাদ্রিদ। শিরোপা সাফল্য পেতে টাকার বস্তা খুলতে কার্পণ্য নেই পেরেজেরও।