টেলিভিশনে মুক্তি পেল আমির খান প্রযোজিত ছবি রুবারু রোশনি। স্বাতী চক্রবর্তী ভাটকল পরিচালিত ছবিটি স্টার নেটওয়ার্কের সব কটি চ্যানেলে দেখানো হয়েছে। তাদের অনলাইন প্লাটফর্ম হটস্টারেও উঠেছে ছবিটি। মাস তিনেক পর নেটফ্লিক্সেও এটি দেখা যাবে। রুবারু রোশনি ছবির মধ্য দিয়ে আমির ও স্বাতী একটা চিরন্তন বার্তাই পৌঁছে দিতে চেয়েছেন—‘ক্ষমা পরম ধর্ম’। আমির খান তাঁর বান্দ্রার ফ্ল্যাটে বসে ছবিটি নিয়ে কথা বলেন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে। সেখানেই প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য কিছু সময় আলাপ করেন বলিউডের এই মহাতারকার সঙ্গে।একটু ওজন বেড়েছে মনে হচ্ছে। নতুন কোনো ছবির প্রস্তুতি?
(সশব্দে হেসে) না, ছবির জন্য নয়। এখন শুটিং নেই বলে একটু মুটিয়ে গেছি। শুটিং আমি খুব উপভোগ করি। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে ডায়েট, জিম শুরু করব। কারণ আমাকে আগামী ছবির জন্য পাতলা হতে হবে।
এরপর কোন ছবিতে কাজ করবেন, তা নিশ্চয় চূড়ান্ত?
হাতে চারটি ছবির চিত্রনাট্য আছে। আর আমার সচরাচর সব ছবির চিত্রনাট্য মনে ধরে না। এই প্রথম চারটে ছবির চিত্রনাট্য একসঙ্গে ভালো লেগেছে। এর মধ্যে দুটো ছবিতে কাজ করার ইচ্ছা আছে। তবে আমি এখনই এ ব্যাপারে বলতে চাই না। কারণ কথা বেশি দূর এগোয়নি। এক মাস পরেই জানতে পারবেন আমার ছবির ব্যাপারে।
‘রুবারু রোশনি’ ছবিটা আমিরকে কতটা বদলেছে?
আগে আমি কিছুতেই সহজে কাউকে ক্ষমা করতাম না। একটু কঠোর প্রকৃতির ছিলাম। এই ছবির ঘটনাগুলো দেখার পর নিজের মধ্যে বদল এসেছে। স্বাতীর কাছে তিনটি সত্য ঘটনা শুনে আমি দারুণভাবে প্রভাবিত হই। শুধু ভারতে নয়, সারা দুনিয়ায় বলা হয়েছে ক্ষমার কথা। আর আমরা এই চরম সত্যটাই ভুলে গেছি।
আপনি কি আপনার সন্তানদের এই মূল্যবোধ শেখান?
অবশ্যই। আমি আমার সন্তানদের শেখাতে চেষ্টা করি। আমি ওদের সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলি।
আপনি কখনো কাউকে ক্ষমা করেছেন?
খুব ছোট একটা বিষয় নিয়ে জুহির (চাওলা) সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছিল। এরপর টানা সাত বছর জুহির সঙ্গে কথা বলিনি। ইশক ছবির সেটে আমাদের মনোমালিন্য হয়। আমি জুহির ওপর এতটাই ক্ষুণ্ণ ছিলাম যে তার পাশে পর্যন্ত বসতাম না। আমার পাশে জুহি এসে বসলে আমি চেয়ার নিয়ে ৫০ ফুট দূরত্বে চলে যেতাম। শুধু পেশাগত কারণে তার সঙ্গে কথা বলতাম। রীনার সঙ্গে আমার ডিভোর্সের কথা শুনে সাত বছর পর জুহি আমাকে ফোন করে। সে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসতে চায়। আমি তখন কারও সঙ্গে দেখা করতাম না। কিন্তু জুহিকে আসতে বলি। জুহি আমার আর রীনার সম্পর্কের বিষয়ে জানত। তাই সে আমাকে অনেক করে বোঝায় রীনার সঙ্গে মিটমাট করে নেওয়ার জন্য।থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবির ব্যর্থতার জন্য পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ আচার্যকে কি মাফ করতে পেরেছেন?
তাঁকে মাফ করা জরুরি নয়। আমি যে কয়জন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁরা প্রত্যেকেই ভালো। প্রত্যেকে সততার সঙ্গে ছবি বানাতে চেষ্টা করেন। ছবি বানানো একটা টিম ওয়ার্ক। এর ভালো-মন্দের সব দায়ভার দলের সবার ওপর বর্তায়। আমি পরিচালককে একা দায়ী করতে পারি না। তবে থাগস অব হিন্দোস্থান–এর জন্য আমি দর্শকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এর কারণ, দর্শক আমার নাম শুনে ছবি দেখতে এসেছেন। তাই তাঁদের আশাহত করার দায় আমার ওপর বর্তায়। এই ছবির জন্য আমাকে অনেক সমালোচিত হতে হয়েছে। দর্শকের তির্যক মন্তব্য শুনতে হয়েছে। আর তাঁদের সম্পূর্ণ অধিকার আছে সব ধরনের মতামত পোষণের। সত্যি বলতে দীর্ঘদিন আমার কোনো ছবি ফ্লপ করেনি (সশব্দে হেসে)। তাই আমার সমালোচনা করার সুযোগ দর্শক অনেক দিন পর পেয়েছেন।
এই ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য কিছু কি ভেবেছেন?
একটাই উপায় আছে। একটা ভালো ছবি করতে হবে।
তবে কি ‘মহাভারত’ আসতে চলেছে?
মহাভারত-এর কথা আমি কখনো ঘোষণা করিনি। সবকিছু মিডিয়ার তৈরি।
স্বাতীর সঙ্গে আপনার পরিচয় কবে?
১৯৮৪ সাল থেকে আমি স্বাতীকে চিনি। আসলে স্বাতী আমার স্কুলজীবনের বন্ধু সত্যার স্ত্রী। সত্যা অর্থাৎ সত্যজিৎ ভাটকল ‘সত্যমেভ জয়তে’ টেলিভিশন শোর পরিচালক। আমার সাবেক স্ত্রী রীনাকে আমি গোপনে বিয়ে করি। আমাদের রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়। বিয়েতে সাক্ষী ছিল সত্যা, স্বাতী আর সত্যার ভাই আনন্দ। রীনার সঙ্গে আমার বিয়েটা সবচেয়ে ‘ইকোনমিক্যাল ম্যারেজ’ বলা যায়। আমি ৫০ পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে বাসে চেপে আমার বাড়ি থেকে বান্দ্রা স্টেশনে যাই। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে বিয়ের জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়েছিলাম। দশ রুপির মধ্যে রীনার সঙ্গে বিয়েটা সেরে ফেলি। এরপর সত্যার বাড়িতে আমরা পাঁচজন মিলে পার্টি করি। পার্টিতে জুস, মিষ্টি এসব ছিল। সত্যার মা স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন। তিনি তখন বাড়িতে ছিলেন না। সত্যার মা আসার পর আমরা তড়িঘড়ি করে সবকিছু সোফার তলায় লুকিয়ে ফেলি।
গোপনে বিয়ে করার কারণ কী ছিল?
সেসব বলতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। আমার বায়োপিকে সব কথা বলব (সশব্দে হেসে)।
অভিনয়জীবনের শুরুর দিকে আপনি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে যেতেন। কিন্তু এখন যান না, এর কারণ কী?
ক্যারিয়ারের শুরুর প্রথম দুই বছর আমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে গিয়েছি। কিন্তু তারপর আমার আর যাওয়ার ইচ্ছা হয়নি। কারণ, আমার মনে হয়েছে, এই পুরস্কারের মূল্য অর্থহীন।